প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতিটি উপাদান একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ, ক্ষুদ্রজীব, প্রাণী ও মানুষ প্রত্যেকে পরিবেশের একটি সহনশীল অবস্থায় বসবাস করে। তার পরিবেশের সহনশীল অবস্থার পরিবর্তন হলে এই নির্ভরশীলতা ব্যাহত হয়। যে কোনো দেশের জন্য উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়ন নির্ভর করে অর্থনৈতিক কার্যাবলির উপর। যা আমাদের দেশে এখনও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সবকিছুই করতে হবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। টেকসই ও উন্নয়ন পরিবেশ সমন্বিত করে গড়ে তুলতে হবে।
একটি দেশের জন্য উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মানুষ ও দেশ চায় উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে। এজন্য দেশের অভ্যন্তরীণ কিছু উন্নয়ন সাধন করতে হয়। পরিবেশের সমন্বয় করে এ সকল উন্নয়ন করা উচিত। আমরা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এমনভাবে পরিচালনা করব যেন তা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না করে।
উন্নয়ন |
কৃষিক্ষেত্রে | শিল্পক্ষেত্রে | যোগাযোগের ক্ষেত্রে | বাসস্থানের ক্ষেত্রে |
তোমার বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার রাস্তা যদি কাঁচা বা ভাঙা থাকে দেখবে কিছুদিন পর তা নতুন করে তৈরি বা মেরামত করে ব্যবহারের উপযোগী করা হচ্ছে। আবার তোমার চারপাশে একটু মনোযোগ দিয়ে দেখতে পাবে যে, টিন বা কাঠের বাড়িগুলো পরিবর্তিত হয়ে ইটের দালান হচ্ছে। এই যে চাহিদার সঙ্গে কোনো কিছুর উপযোগিতা বৃদ্ধিকরণ, এটাই উন্নয়ন ।
এরূপ সেতু, বাঁধ, শিল্পকারখানা, সড়কপথ, রেলপথ এমনভাবে তৈরি করা যা পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের স্বাভাবিকতা বাঁধাগ্রস্ত না করে। বাংলাদেশ উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমশ ঢালু। ফলে পূর্ব-পশ্চিমগামী স্থল যোগাযোগে অধিক সেতু নির্মাণ জরুরি। শিল্প বর্জ্য বিভিন্ন নদীকে দূষিত করে ফেলেছে। নদী ভরাট করে শিল্প গড়ে উঠছে। জলাধার ভরাট করে বসতি তৈরি করে শিল্পকারখানা সৃষ্টি হচ্ছে, যা পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই যে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এমনভাবে করা উচিত যা পরিবেশ ও সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। একটি পুকুরের চারপাশের গাছপালা ধ্বংস করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করলে, পুকুরের প্রথমে ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং পরে মৎস্য ধ্বংস হয়ে যাবে। এভাবে পুকুরটি মজা পুকুরে পরিণত হবে ও দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ আহরণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অবশেষে পুকুরটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের কয়েকটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড (Some development activities of Bangladesh )
পূর্বের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য তার চাহিদা অনুযায়ী কোনো কিছুর উপযোগিতা বৃদ্ধিকরণ হচ্ছে উন্নয়ন। আমাদের আলোকশক্তি ব্যবহারের দিকে তাকালে সহজে তা বুঝতে পারব। আমরা তেল সরাসরি ব্যবহার করে প্রদীপ জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করতাম। এখন তেল, গ্যাস বা কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা দ্বারা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়। এর আলোকশক্তি অনেক বেশি। এই পরিবর্তন হচ্ছে উন্নয়ন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি আলোচনা করা হলো :
কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন (Development in agriculture sector)
অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৃষিখাতের উন্নয়নের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য কৃষির অগ্রগতি প্রয়োজন। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সারের ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই জমিতে বছরের সকল সময়ই চাষ হচ্ছে। কৃষির উন্নয়নের জন্য আমরা যা করছি তা নিম্নরূপ :
কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি |
সার প্রয়োগ | একই জমি অধিকবার ব্যবহার | কীটনাশক ব্যবহার | ভূমিতে পানিসেচের ব্যবহার |
শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়ন (Development in industrial sector)
সামাজিক অগ্রগতির জন্য দ্রুত শিল্প উন্নয়ন অপরিহার্য। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পখাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নোক্তভাবে শিল্পখাতে উন্নয়ন করা হয়।
শিল্প উন্নয়ন: উৎপাদন শিল্প, জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য জ্বালানি শিল্প, কৃষিজ ও বনজ শিল্প, খনিজ সম্পদ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, পর্যটন ও সেবা শিল্প, নির্মাণ শিল্প, তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প ।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়ন (Development in transport and communication sector)
কৃষি এবং শিল্পের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে যোগাযোগ। তাই যোগাযোগের উন্নয়নের উপর দেশের উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভর করে। যুগোপযোগী, সুসংগঠিত এবং আধুনিক পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের জন্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আজ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, টিভি, রেডিও ও প্রযুক্তির বিকাশ দ্রুত প্রসার লাভ করেছে। এছাড়া মহাসড়ক, সেতু,, ফেরিঘাট নির্মাণ ও ফ্লাইওভার ব্রিজ নির্মাণ প্রভৃতির মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।
বাসস্থানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন (Development in housing sector)
বাসস্থানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন পেশের অন্যান্য উন্নয়নের উপর কিছুটা নির্ভর করে। এটা অবকাঠামোগত উন্নয়ন। বাসস্থানের উন্নয়নের জন্য খাওয়ার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও বর্জ্যের জন্য উন্নত ড্রেনেজ প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের সমন্বিত রূপ হচ্ছে বাসস্থানের উন্নয়ন ।
উন্নয়ন সকল দেশের কাম্য। টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন হলে তা দেশের জন্য মঙ্গল। স্বল্প শিক্ষা, পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং অধিক লাভের আশায় আমরা পরিবেশকে দূষিত করি। পরিবেশের প্রধান উপাদান হচ্ছে জমি বা ভূমি, পানি, বায়ু এবং বনজ সম্পদ। পূর্বালোচিত উন্নয়নসমূহ পরিবেশের প্রধান উপাদানগুলোকে কীভাবে দূষিত করে তা আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি।
ভূমি |
অধিক ফসল উৎপাদন-উর্বরতা হ্রাস → মাটির জৈব উপাদান কমে যায়। | অধিক সার প্রয়োগ -কীটনাশক ব্যবহার -মাটি দুর্বিত হয়ে যায়। | বন, পাহাড় কেটে আবাদি জমি- জমি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে -মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায় । |
ফলাফল : মাটিতে যেসব অণুজীব, ক্ষুদ্রজীব বাস করে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্য ক্ষুদ্র প্রাণীগুলোর আবাসস্থল নষ্ট হয়। দুষিত মাটিতে উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না, ফলে ভূমি মরুকরণ হয়।
পানিঃ কৃষিক্ষেত্রে অধিক কীটনাশক সংযুক্ত হয়। যোগাযোগের যানবাহন থেকে ভেল বর্জ্য সং হয়। শিল্পক্ষেত্রে রং, গ্রিজ, রাসায়নিক দ্রব্য ও ঊষ্ণ পানি সংযুক্ত হয়। আবাসস্থলের বর্জ্য, নদীর পাড় দখল, পানি দূষিত ও নদীর প্রবাজের বাধা সৃষ্টি হয়। পানি দূষিত হয়ে জলজ প্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হয়।
ফলাফল : জनজ ক্ষুদ্র ডিস প্ল্যাংকটন, কচুরিপানা, শেওলা জন্মাতে পারে না। এদের ভক্ষণ করে, যেসব ক্ষুদ্র মাছ তাদের খাদ্যের অভাব হয় এবং বড় মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বায়ু |
শিল্পক্ষেত্রের বর্জ্য | পরিবহনের ধোঁয়া | গৃহস্থালির ধোঁয়া | নির্মাণসামগ্রী তথা ইটভাটার ধোঁয়া |
ফলাফলঃ এগুলো বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) ও ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (CFC) গ্যাস-এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যার ফলে প্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। স্বাভাবিক তাপমাত্রাকে বৃদ্ধি করছে। পরোক্ষ ফল হিসেবে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে। মাটি অধিক তাপমাত্রা গ্রহণ করছে। ফলে অনেক স্থান উদ্ভিদহীন হয়ে পড়ছে।
বনজ সম্পদ কোনো দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সবচেয়ে বড় উপাদান। আমাদের দেশের বনভূমির পরিমাণ শতকরা প্রায় ১৭ ভাগ। তারপরও আমরা এই বনজ ঝোপঝাড়, কাঠ প্রভৃতি আসবাবপত্র, গৃহনির্মাণ, শিল্প ও জ্বালানির ক্ষেত্রে ব্যবহার করি। ফলাফল হিসেবে বনজ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বন উজাড় হচ্ছে, মাটি উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে মৃত্তিকা ক্ষয়ে যাচ্ছে দ্রুত সাথে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে।
পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার পরিণতি (The result of environmental imbalance)
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, সম্পদের অধিক ব্যবহারের ফলে আমাদের যে তিন ধরনের বায়ুসংস্থান বিদ্যমান (are, मজ ও লজ) প্রত্যেকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। জজ বাসংস্থান নষ্ট হওয়ার ফলে অনেক জলজ প্রাণী ও মাছ বিলুপ্ত। বনজ সম্পদের অনেক বৃক্ষ বিলুপ্ত ও কিছু বৃক্ষ বিলুপ্তির মুখে। অনেক বনজ প্রাণী ধ্বংস হয়েছে। বনজঙ্গল বেশি কেটে ফেলার ফলে শৃগাল, খরগোশ, বনবিড়াল প্রভৃতির বাসস্থান নষ্ট হয়েছে, যা খাদ্য শৃঙ্খলকে ভেঙে দিয়েছে। এর প্রভাব স্থলজ প্রাণীর বাসস্থানের উপর তথা মানব সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমরা দেখতে পাই অতিরিক্ত মাত্রায় সম্পদ ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে উত্তরাঞ্চলে উত্তপ্ততা এবং শৈত্যপ্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে অতিরিক্ত শিল্পায়নের কারণে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে আমাদের দেশের সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে সাতক্ষীরা, বরিশাল ও নোয়াখালী জেলার অনেক অংশ সমুদ্রের জলমগ্ন হয়ে পড়বে। এছাড়া ভূনিম্নস্থ পানিতে লোনা পানি প্রবেশ করছে। ফলে স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মানোর পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে (চিত্র ১৩.২)। পাহাড় ও ভূমিধস বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। পরোক্ষভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের বিভিন্ন সংক্রমণ রোগ, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ও পেটের পীড়া। এভাবে চলতে থাকলে পুরো পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। দেখা দেবে নানা বিপর্যয়। তাই সহনশীল টেকসই পরিবেশ আমাদের কাম্য। আমরাই আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার উপায় (The techniques of keeping the balance of environment)
আমরা পরিবেশ থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করি। এই প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার যথাযথ হলে পরিবেশ টিকে থাকবে। তাই সম্পদের সংরক্ষণ তথা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তৎপর হতে হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণঃ অবস্থার পরিবর্তন না করা (নদীর গতিপথ পরিবর্তন), পাহাড়ের মাটি কাটা বন্ধকরণ, ক্ষতিপূরণ (নদীর তলদেশ ভরাট হলে তা খনন করা ), নদীর পাড় দখল মুক্তকরণ, সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার (বায়ু, পানি ও মাটি দূষণ না করা) । পরিবেশ দিনে দিনে নষ্ট হচ্ছে কিন্তু তাকে কে রক্ষা করবে? এর দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমাদের উচিত পরিবেশের উপাদানের প্রতি যত্নশীল হওয়া, সতর্কতার সঙ্গে সম্পদ ব্যবহার করা। তাহলে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যাবে ।
বনজ সম্পদ জাতীয় অর্থনীতিতে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বনাঞ্চলে অবৈধ প্রবেশ ও জ্বালানির উদ্দেশে ব্যাপক গাছপালা নিধন ইত্যাদি কারণে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া মাটি দূষণ, বায়ু দূষণ প্রভৃতি রোধ করলে তবে পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব।
বন উন্নয়ন ও সংরক্ষণঃ দেশে ব্যাপক বনায়ন ও বন সংরক্ষণ, বন সম্পদের ঘাটতি পূরণ, কাঠভিত্তিক শিল্পকারখানায় কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ। বন সংরক্ষণে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা নিম্নরূপঃ
১। নিঃশেষিত পাহাড় এবং খাস জমিতে বনের বিস্তার ঘটানো।
:২। গ্রামীণ এলাকায় পতিত ও প্রান্তিক জমিতে বৃক্ষরোপণ ।
৩। সড়কপথ, রেলপথ ও সকল প্রকার বাঁধের পাশে বনায়ন।
৪। বনায়ন ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণ ও জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি।
৫। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন ।
জ্বালানি ব্যবস্থাকে অধিকতর দক্ষ করে তুলতে হবে। সৌর, বায়ু, পানি, বায়োগ্যাস, সমুদ্র, পশু এবং মানব শক্তিকে ব্যবহার করে নতুন ও পুনব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উদ্ভাবন করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ নিম্নরূপ :
১। পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার রোধ
২। শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের উপযুক্ত পরিশোধন ব্যবস্থা গড়ে তোলা
৩। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ
৪। সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলা
৫। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ
৬। নদী বাঁচাও কর্মসূচি
৭। ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ
জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবস যেমন- বিশ্ব পরিবেশ দিবস, বিশ্ব মরুময়তা দিবস, আন্তর্জাতিক ওজোন দিবস ইত্যাদি পালনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে সকলের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। |
দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ এবং পরিবেশগত অবক্ষয় রোধের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত নীতি, সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নয়ন, পরিবেশসম্মত টেকসই পদ্ধতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কর্মসূচি। এ লক্ষ্যে সরকার ও জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব।
একই পরিবেশে বহু ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক অবস্থানকে জীববৈচিত্র্য বলে। পরিবেশ ভারসাম্য পূর্ণ হয় এই ধরনের জীবের একত্রে অবস্থানের কারণে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ (Conservation of Biodiversity)
জীববৈচিত্র্য পরিবেশ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার মূল উপাদান। মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও সেবার উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। খাদ্য, পরিধেয়, বাসস্থান, ঔষধ, বিনোদন ইত্যাদির জন্য মানুষ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। এ সকল সম্পদ বনাঞ্চল, নদী-নালা, অন্যান্য জলাশয় ও সমুদ্র থেকে আহরণ করা হয় । মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড অবাধে চলতে থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে ২০-২৫ শতাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য প্রচুর এবং তার সম্ভাবনাও অনেক। তবে তা আজ হুমকির সম্মুখীন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সংকুচিত হচ্ছে অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল। তারা হারিয়েছে তাদের শিকারের ক্ষেত্র। এককালে বাংলাদেশের অনেক এলাকা জুড়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা ডোরাকাটা বাঘ দেখা যেত। এখন তাদের কেবল সুন্দরবনেই খুঁজে পাওয়া যায়। উনিশ শতকের শুরুতে ভাওয়াল ও মধুপুরের গড় অঞ্চলে হাতির দেখা মিলেছে। এখন কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট এবং ময়মনসিংহের পাহাড়েই হাতি দেখা যায় ।
বাংলাদেশে ১১৯ জাতের স্তন্যপায়ী, ৫৭৮ জাতের পাখি, ১২৪ জাতের সরীসৃপ ও ১৯ জাতের উভচরকে শনাক্ত করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার কর্তৃক প্রকাশিত রেড ডাটা বুক-এ বাংলাদেশের ২৩টি প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হাতি, অজগর, কুমির ও ঘড়িয়াল ইত্যাদি। কারো মতে বাংলাদেশে ২৭টি বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন । আরও ৩৯টি প্রজাতি হুমকির সম্মুখীন। উনিশ শতকেই ১৯টি প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে তিন ধরনের গরু, বুনো মহিষ, এক ধরনের কালো হাঁস, নীল গাই, কয়েক ধরনের হরিণ, রাজশকুন ও মিঠা পানির কুমির ইত্যাদি।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন জরুরিভিত্তিতে দৃঢ় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, এনজিও, বেসরকারি খাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার এবং নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
Read more